বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলার আসল ইতিহাস

ক্রিকেটে বাংলাদেশ পরিচিত টাইগার ক্রিকেট বা বাংলার বাঘ নামে। বাংলাদেশের মানুষের কাছে এক আবেগের নাম ক্রিকেট। টাইগার ক্রিকেট নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ এর আগ্রহ সবসময় একটূ বেশি। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ক্রিকেট মিশে গেছে মানুষের রক্তে।

ক্রিকেট এর জয়ের দিনে যেমন উদযাপন এর কমতি থাকে না তেমনি বাংলাদেশের ক্রিকেট এর খারাপ সময়ে বাংলার মানুষকে অশ্রু ভিজাতেও দেখা গেছে। খারাপ এবং ভাল সময় মিলিয়ে সবশেষে উপভোগ করে বাংলার এই প্রাণের খেলাটি।

বাংলাদেশ ক্রিকেট এর জন্ম

ক্রিকেটে বাংলাদেশের আগমন ইংরেজদের হাত ধরে।।ক্রীড়াসংগঠক,বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন এবং খেলোয়াড়দের আগ্রহে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের ক্রিকেট ১৯৭৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার (আইসিসি) সহযোগী সদস্যে পদ লাভ করে।

এর পরেই রাকিবুল হাসানের নেতৃত্বে ১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হওয়া আইসিসি ট্রফিতে অংশগ্রহনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে টাইগারা। যেখানে ৪ ম্যাচে ২টি জয় এবং ২টি হার দিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করে।১৯৮৬ সালের ৩১শে মার্চ বাংলাদেশ গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর নেতৃত্বে এশিয়া কাপ ক্রিকেটে টাইগাররা সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে পাকিস্তানের বিপক্ষে অংশগ্রহণ করে।

২০০০ সালের ২৬ জুন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল দশম টেস্ট দল হিসাবে আইসিসির কাছ থেকে সদস্যপদ লাভ করে। ২০০০ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ১৫০ টি টেস্ট ম্যাচে অংশগ্রহন করেছেে এবং ২২ টি ম্যাচে জয়লাভ করেছে।জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সর্বপ্রথম টেস্ট জয় লাভ করে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে। ক্রিকেট এর বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশ টাইগার্স নামে পরিচিত। ১৯৭৭ থেকে ২০২৫ বাংলাদেশ ক্রিকেটে র‍য়েছে উঠা নামার অনেক গল্প।ওয়াডে ,টি-২০,টেস্ট তিন জায়গায় বাংলাদেশ যেমন সাফল্য পেয়েছে অনেক।

বাংলাদেশের মানুষ ছিল ক্রিকেটের জন্য নিবেদিন প্রান। শুরুর দিকে অনেক চ্যালেঞ্জ এর মুখোমুখি হলেও সময়ের সাথে সাথে তা এনেকটাই কমে গেছে। বড় দল গুলো সাথে খেলা ছিল সে সময় সপ্নের মত।কিন্তু আজ বড় দল গুলোর বিপক্ষে অনেকটাই আগ্রাসী ভূমিকায় দেখা যায় বাংলাদেশকে। টেস্ট, ওয়ানডে,টি-২০ এ বাংলাদেশের র‍্যাঙ্কিংয় ৯ এ অবস্থান করছে (ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থার)।

ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ইতিহাস

১৯৯৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট বাংলাদেশ

১৯৯৯ সালের ইংল্যান্ডের পাশাপাশি আয়ারল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডস সহঃ আয়োজনে করা বিশ্বকাপে প্রথম খেলার সুযোগ পায় আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে গড়া বাংলাদেশ দল। আর তাতেই বাজিমাত করে টাইগাররা পাকিস্তান কে ৬২ রানে এবং স্কটল্যান্ডকে ২২ রানের হারিয়ে বিশ্বমঞ্চে তাদের শক্তির জানান দেয়।

২০০৩ বিশ্বকাপ ক্রিকেট বাংলাদেশ

২০০৩ বিশ্বকাপে মুদ্রার উল্টো পিট দেখতে হয় টাইগার দের । আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে এবং কেনিয়ায় যৌথভাবে ২০০৩ বিশ্বকাপ আয়োজন করে। কানাডার কাছেই প্রথম ম্যাচেই হারের সাধ পায় বাংলাদেশ।৬০ হারে হারতে হয় টিম টাইগার্সদের।

ফিরে আসার পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে আরো ধবলধোলাই হয় টাইগার বাহিনী। শ্রীলঙ্কা ম্যাচটা জিতে নেয় ১০ উইকেটে । আর শেষ ম্যাচে কেনিয়ার কাছে হারে ৩২ রানে। ২০০৩ বিশ্বকাপ বাংলার ক্রিকেট প্রেমীরা কখনই মনে রাখতে চাইবে না এমন বাজে হারের পর।

২০০৭ বিশ্বকাপ ক্রিকেট বাংলাদেশ

২০০৭ বিশ্বকাপ আয়োজন হয় ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে । বাংলাদেশ এর ক্রিকেট দল এ বিশ্বকাপে পাওয়া না পাওয়ার মধ্যে দিয়ে যায়। তরুণ ক্রিকেটার মানজারুল ইসলাম রানা মৃত্যু সংবাদ পায় ভারতের সাথে আসরের প্রথম ম্যাচের আগেই।এই শোকই যেন কাল হলো ভারতের কাছে।

মাশরাফি বিন মুর্তজা অসাধারণ বোলিং জাদুতে ভারতকে গুটিয়ে দেয় টাইগাররা। ১৯২ রান তাড়া করতে নেমে ৫ উইকেটে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। পরের ম্যাচে বারমুডার কাছে জিতে দ্বিতীয় রাউন্ডের নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় রাউন্ডে যেন আরও ভয়ানক রুপে আসে হাবিবুল বাশারের দল।

দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৬৭ রানে হারিয়ে ইতিহাস রচনার হাতছানি দেয়ার সুযোগ আসে বাংলার দামাল ছেলেদের হাতে। কিন্তু ভাগ্য সায় দেয়নি। ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সহজ জয় তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে শোককে শক্তিতে রুপান্তর করে ২০০৭ বিশ্বকাপ রাঙ্গিয়েছিল টিম টাইগার্স।

২০১১ বিশ্বকাপ ক্রিকেট বাংলাদেশ

২০১১ বিশ্বকাপ ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের ঐতিহাসিক ঘটনা।২০১১ সালে সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ আয়োজন করে বিসিবি (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড)।কিন্তু ঘরের মাঠে হলেও সুবিধা করতে পারিনি টিম টাইগার্স।ভারতের কাছে প্রথম খেলায় হেরে বসে বাংলাদেশ।

এর পরের খেলাতেই আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। কিন্তু পরের খেলায় ঘটে ইতিহাসের লজ্জজনক পরাজয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে মাত্র ৫৮ রানের অলআউট হয় সাকিব বাহিনি। চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডেকে হারিয়ে আবারও নিজেদের জায়গা শক্ত করে বাংলাদেশ।

শেষ খেলায় জিততেই হবে বাংলাদেশ কে দক্ষিণ আফ্রিকা বিপক্ষে এমন সমীকরণে ৭৮ রানের অলআউট এর মধ্য দিয়ে দুঃস্বপ্ন পরিণত হয় ঘরের মাঠের বিশ্বকাপ।

২০১৫ বিশ্বকাপ ক্রিকেট বাংলাদেশ

বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত সফল বিশ্বকাপ খেলেছে ২০১৫ সালে। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড এক সাথে আয়োজন করে ২০১৫ বিশ্বকাপ। আফগানিস্তানকে ১০৫ রানে হারিয়ে শুভ করে বিশ্বকাপ যাত্রা।কিন্তু পরের খেলায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯২ রানে হেরে বসে বাংলাদেশ।

দারুণ ভাবে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৩১৯ রানের চ্যালেঞ্জটা পূরণ করে আত্নবিশ্বাস ফিরে পায়। পরের খেলায় সমীকরণ আসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিতলেই নকআউট পর্বে খেলবে বাংলাদেশ।অবশেষে আসে এই সময় ইংল্যান্ডকে চুপ করিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ জিতে যায় ১৫ রানে।যা বাংলার ক্রিকেট প্রেমীরা কখনই ভুলবে না।

নিয়ম রক্ষার ম্যাচে নিয়মিত অধিনায়ক ছাড়াই খেলতে নেমে কিউইরা ম্যাচ জিতে ৩ উইকেটে। নকআউট পর্বে ভারতের বিপক্ষে খেলতে নেমে আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বলি হয় বাংলাদেশ। ৩০২ রানের জবাবে খেলতে নেমে বাংলাদেশ থামে ১৯৩ রানে। শেষ হয় টাইগারদের স্বপ্নযাত্রা।

২০১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেট বাংলাদেশ

ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস ক্রিকেট বিশ্বকাপ করেছিল। বাংলাদেশ সেই বিশ্বকাপে শুরু করেছিল দাপটের সাথেই।প্রথম ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। ২১ রানে জিতে নেয় সেই ম্যাচ।এর পরের খেলাতেই হতাশ হতে হয় বাংলাদেশকে। কিউইরা ২ উইকেটে জিতে যায় সেই ম্যাচ।যদি চেষ্টার কোন কমতি ছিল না।

বিশ্বকাপের ১২তম খেলায় ইংল্যান্ডে সাথে বাংলাদেশ হারে ১০৬ রানে। শ্রীলঙ্কার সাথে ৩য় ম্যাচ ভেসে যায় বৃষ্টিতে। তাই পরের ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিল না বাংলার।ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বড় রান তাড়া করতে নেমে ৭ উইকেটে জিতে বাংলাদেশ।কিন্তু অস্ট্রেলিয়া সাথে পরের খেলাতেই ৪৮ রানে হেরে বিদায়ের সংকা জাগে। কিন্তু পরের খেলায় আফগানিস্তানকে ৬২ রানে হারিয়ে স্বপ্নদিকে হাটতে থাকে টিম টাইগার্স।

পরের খেলায় ভারতের সাথে আবারো হারতে হয় ২৮ রানে। এবার দুঃস্বপ্ন হয়ে আসে পাকিস্তান ।তাদের কাছে বাংলাদেশ হারে ৯৪ রানে।যা বিশ্বকাপের রেস থেকে অনেকটাই দূরে সরিয়ে দেয়।

2023 বিশ্বকাপ ক্রিকেট বাংলাদেশ

২০২৩ বিশ্বকাপ বাংলাদেশের জন্য ছিল অনেকটাই হতাশার। শুরুটা যতটা ভাল হয়েছে সেই ধারা ধরে রাখতে পারেনি টাইগারা। শুরুতে আফগানিস্তানের সাথে দাপুটে জয়। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ জিতে যায় ৬ উইকেটে।পরের ম্যাচেই ইংল্যান্ড এর সাথে হেরে বসে ১৩৭ রানে।

নিজেদের ৩য় ম্যাচে নিউজিল্যান্ড এর সাথেও পেড়ে উঠেনি বাংলাদেশ। চেন্নাই এর মাঠে ৮ উইকেটে জিতে যায় কিউইরা।আত্নবিশ্বাস হারাতে থাকা বাংলাদেশ আরো সমস্যায় পরে ভারতের সাথে পয়েন্ট হারিয়ে।ভারত হেসে খেলে জিতে যায় ৭ উইকেটে।

এর পর দক্ষিণ আফ্রিকা বধের মিশনে নেমে ১৪৯ রানের বিশাল হারের সাদ পায় বাংলাদেশ। থাকা আলোটা ফিরে আসে নেদারল্যান্ডস এর বিপক্ষে জয়ে। নেদারল্যান্ডসকে ৮৭ রানে হারায় টিম টাইগার্স। কিন্তু আবারো পাকিস্তান ম্যাচেই দেখতে হয় হারের দেখা।পাকিস্তান ৭ উইকেটে জিতে যায়।

শ্রীলঙ্কা সাথে পরের ম্যাচে জিতেই আবারো ফিরে আসার বার্তা দিতে থাকে টাইগারা।সেই সাথে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন ট্রফি খেলাও নিশ্চিত করে। কিন্তু সে আশা পাণী ঢেলে দেয় মাইটি অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে এর বড় জয় পায়।সে খেলায় হেরেই বিশ্বকাপ মিশন শেষ করে বাংলাদেশ।

2 thoughts on “বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলার আসল ইতিহাস”

Leave a Comment